প্রিয় পাঠক গণ বার বার জ্বর আসার কারণ, এবং কি কি পদক্ষেপ নিলে আপনার বার বার জর আশা সমস্যা আর থাকবেনা চলুন বিস্তারিত পড়ি।
বার বার জ্বর আসার কারণ, সাধারণ কারণ:
- ভাইরাস: সর্দি, কাশি, ফ্লু, ডেঙ্গু, চিকেনপক্স, মাম্পস, রুবেলা ইত্যাদি ভাইরাসজনিত রোগের কারণে বার বার জ্বর আসতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়া: জ্বর, গলাব্যথা, কান ব্যথা, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI) ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের কারণে জ্বর হতে পারে।
- প্যারাসাইট: ম্যালেরিয়া, কালা-আজার, লিশম্যানিয়াসিস ইত্যাদি প্যারাসাইটজনিত রোগের কারণে জ্বর হতে পারে।
- অন্যান্য: ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, রক্তের রোগ (যেমন লিউকেমিয়া), অ্যালার্জি, ক্যান্সার ইত্যাদির কারণেও জ্বর হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী জ্বরের কারণ:
- যক্ষ্মা: দীর্ঘস্থায়ী কাশি, রক্ত কাশি, রাতের ঘাম, ওজন হ্রাস, দুর্বলতা সহ দীর্ঘস্থায়ী জ্বর যক্ষ্মার লক্ষণ হতে পারে।
- HIV/AIDS: দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, রাতের ঘাম, ওজন হ্রাস, দুর্বলতা, গ্লান্ড ফুলে যাওয়া HIV/AIDS-এর লক্ষণ হতে পারে।
- অন্যান্য: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, লুপাস, ক্রোন’স রোগ, আলসারেটিভ কোলাইটিস ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে জ্বর হতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
- যদি জ্বর 3 দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
- যদি জ্বরের সাথে অন্যান্য উপসর্গ থাকে যেমন তীব্র কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, গলাব্যথা, কান ব্যথা, মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, ঘুম থেকে জাগা, ঘাম ঝরা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, রক্তপাত ইত্যাদি।
- যদি শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তির জ্বর হয়।
- যদি আপনার দীর্ঘস্থায়ী জ্বর থাকে।
বার বার জ্বর প্রতিরোধের উপায়:
- নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া।
- কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ ঢাকা।
- ভিড় এড়িয়ে চলা।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও তরল পান করা।
- সুষম খাবার খাওয়া।
- ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- টিকা নেওয়া।
আরও পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় কেন?
জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ:
হাইপোথ্যালামাস: আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক একটি অংশ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি একটি থার্মোস্ট্যাটের মতো কাজ করে, যা শরীরের তাপমাত্রা স্থির রাখার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
সংক্রমণ: যখন আমাদের শরীরে সংক্রমণ হয়, তখন আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই লড়াইয়ের অংশ হিসাবে, হাইপোথ্যালামাসকে সংকেত পাঠানো হয় যাতে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ানো হয়।
কার্যপ্রণালী:
- প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন: সংক্রমণের সময়, শরীর প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে। প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন হাইপোথ্যালামাসকে সংকেত দেয় যে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ানো প্রয়োজন।
- সাইটোকাইন: সাইটোকাইন নামক অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থও জ্বরের জন্য দায়ী হতে পারে। সাইটোকাইন হাইপোথ্যালামাসকে প্রভাবিত করে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী অন্যান্য কোষগুলিকেও প্রভাবিত করে।
উদ্দেশ্য:
- জীবাণু ধ্বংস: উচ্চ তাপমাত্রা অনেক ক্ষতিকর জীবাণুর বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে।
- প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী: জ্বর শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
- ইন্টারফেরন: উচ্চ তাপমাত্রা ইন্টারফেরন নামক প্রোটিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে।
মনে রাখবেন: জ্বর সাধারণত একটি ভাল লক্ষণ, কারণ এটি দেখায় যে আপনার শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তবে, যদি জ্বর 103°F (39.4°C) এর বেশি হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য গুরুতর উপসর্গের সাথে থাকে তবে ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর ঘন ঘন জ্বর আসার কারণ কি?
শিশুদের ঘন ঘন জ্বর আসার অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ:
সংক্রমণ:
- ভাইরাস: সর্দি, কাশি, ফ্লু, ডেঙ্গু, চিকেনপক্স, মাম্পস, রুবেলা ইত্যাদি ভাইরাসজনিত রোগের কারণে শিশুদের ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়া: জ্বর, গলাব্যথা, কান ব্যথা, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI) ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের কারণে জ্বর হতে পারে।
- প্যারাসাইট: ম্যালেরিয়া, কালা-আজার, লিশম্যানিয়াসিস ইত্যাদি প্যারাসাইটজনিত রোগের কারণে জ্বর হতে পারে।
অন্যান্য কারণ:
- দাঁত বের হওয়া: 6 মাস থেকে 2 বছর বয়সের মধ্যে শিশুদের দাঁত বের হওয়ার সময় জ্বর আসতে পারে।
- রোধকারক টিকা: টিকা দেওয়ার পর কিছু শিশুর জ্বর আসতে পারে। এটি সাধারণত হালকা এবং স্বল্পস্থায়ী হয়।
- অ্যালার্জি: খাবার, ঔষধ বা পরিবেশগত এলার্জির কারণে জ্বর হতে পারে।
- আর্থ্রাইটিস: কিছু ধরণের আর্থ্রাইটিস, যেমন জুভেনাইল রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, জ্বরের কারণ হতে পারে।
- ক্যান্সার: কিছু বিরল ক্ষেত্রে, শিশুদের ক্যান্সার জ্বরের কারণ হতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
- যদি জ্বর 3 দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
- যদি জ্বরের সাথে অন্যান্য উপসর্গ থাকে যেমন তীব্র কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, গলাব্যথা, কান ব্যথা, মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, ঘুম থেকে জাগা, ঘাম ঝরা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, রক্তপাত ইত্যাদি।
- যদি শিশু 6 মাসের কম বয়সী হয় এবং জ্বর হয়।
- যদি শিশুর দীর্ঘস্থায়ী জ্বর থাকে।
মনে রাখবেন:
- এই তথ্য শুধুমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে। কোনও রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার জন্য এটি বিকল্প নয়।
- আপনার যদি কোনও প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে তবে দয়া করে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন।
শিশুর ঘন ঘন জ্বর প্রতিরোধের উপায়:
- নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া।
- কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ ঢাকা।
- ভিড় এড়িয়ে চলা।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও তরল পান করা।
- সুষম খাবার খাওয়া।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- টিকা নেওয়া।
আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
রাতে জ্বর আসার কারণ
রাতে জ্বর আসার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিছু সম্ভাব্য কারণ:
- সার্কেডিয়ান রিদম: আমাদের শরীরের একটি প্রাকৃতিক ঘড়ি থাকে যা “সার্কেডিয়ান রিদম” নামে পরিচিত। এই রিদম আমাদের ঘুম, হরমোন নিঃসরণ এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত, দিনের বেলায় শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে এবং রাতে কমে যায়। কিছু ক্ষেত্রে, এই স্বাভাবিক রিদম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে রাতে জ্বর আসতে পারে।
- সংক্রমণ: ঠান্ডা, ফ্লু, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সংক্রমণ জ্বরের কারণ হতে পারে। রাতে জ্বর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হলো এই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
- প্রদাহজনিত রোগ: আর্থ্রাইটিস, লুপাস, ক্রোন’স রোগের মতো প্রদাহজনিত রোগগুলিতে শরীরে প্রদাহ হয়, যা জ্বরের কারণ হতে পারে। রাতে প্রদাহজনিত উপসর্গগুলি আরও তীব্র হতে পারে, যার ফলে জ্বর বৃদ্ধি পায়।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ জ্বরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে আনতে পারে। যদি আপনি নতুন কোনও ওষুধ খাওয়া শুরু করেন এবং রাতে জ্বর অনুভব করেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
- মানসিক চাপ: চাপ ও উদ্বেগ শরীরে কর্টিসল নামক হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা জ্বরের কারণ হতে পারে। রাতে, যখন মানুষ বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করে, তখন তাদের চিন্তাভাবনা আরও বেশি তীব্র হতে পারে, যার ফলে জ্বর বৃদ্ধি পায়।
- ক্যান্সার: কিছু বিরল ক্ষেত্রে, ক্যান্সার জ্বরের কারণ হতে পারে।
রাতে জ্বর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হলো ক্যান্সার কোষগুলি আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। - অন্যান্য কারণ: কিছু ক্ষেত্রে, রাতে ঘাম ঝরা, ডিহাইড্রেশন, অতিরিক্ত কাপড় পরা, এবং পরিবেশগত কারণগুলির মতো অন্যান্য কারণে রাতে জ্বর হতে পারে।
কখন ডাক্তারের সাথে দেখা করবেন:
- যদি জ্বর 3 দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
- যদি জ্বরের সাথে অন্যান্য উপসর্গ থাকে যেমন তীব্র কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, গলাব্যথা, কান ব্যথা, মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, ঘুম থেকে জাগা, ঘাম ঝরা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, রক্তপাত ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ
ভাইরাস জ্বর কমানোর উপায়
ভাইরাল জ্বর একটি সাধারণ অসুস্থতা যা বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়। এই জ্বর সাধারণত 7-10 দিনের মধ্যে নিজে থেকেই চলে যায়। তবে, কিছু উপায় অবলম্বন করে আপনি জ্বর কমাতে এবং অসুস্থতার লক্ষণগুলো দ্রুত দূর করতে পারেন।
কিছু কার্যকর উপায়:
- বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। শরীরকে সুস্থ হতে সময় দিন।
- তরল পান: প্রচুর পরিমাণে পানি, জুস, স্যুপ, ইলেক্ট্রোলাইটযুক্ত পানীয় পান করুন। ডিহাইড্রেশন এড়াতে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
- ঠান্ডা সেঁক: কপালে ঠান্ডা সেঁক দিন।
- হালকা খাবার: হালকা, সহজপাচ্য খাবার খান। তেল, মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- জ্বর কমানোর ওষুধ: প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেনের মতো জ্বর কমানোর ওষুধ খান। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডোজ নিন।
- লবণ-পানি গার্গল: লবণ-পানি দিয়ে গার্গল করুন। এটি গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
- আর্দ্রতা: ঘরের বাতাস আর্দ্র রাখুন। হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
- ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন: ধূমপান ও মদ্যপান জ্বর আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- ঘরে থাকুন: অন্যদের সংক্রমিত হতে বাধা দিতে ঘরে থাকুন।
কিছু ভুল ধারণা:
- ভাইরাল জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর, ভাইরাল জ্বরের নয়।
- জ্বর থাকাকালীন ঠান্ডা পানি পান করা উচিত নয়। ঠান্ডা পানি জ্বর বৃদ্ধি করে না। বরং, এটি শরীরকে শীতল রাখতে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- গরম পানি জ্বর দ্রুত কমায়। গরম পানি জ্বর কমাতে সাহায্য করে না। তবে, এটি ঘাম বৃদ্ধি করে যা শরীরকে শীতল রাখতে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
- যদি জ্বর 3 দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
- যদি জ্বর 103°F (39.4°C) এর বেশি হয়।
- যদি জ্বরের সাথে অন্যান্য গুরুতর উপসর্গ থাকে যেমন তীব্র কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, গলাব্যথা, কান ব্যথা, মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, ঘুম থেকে জাগা, ঘাম ঝরা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি