মাসিক মিস হওয়ার ১০ দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় | ৭ টি অজানা তথ্য

মাসিক মিস হওয়ার ১০ দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় | মাসিক মিস হওয়ার ১০ দিন পর থেকেই গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। বেশিরভাগ গর্ভাবস্থার পরীক্ষা, প্রস্রাব বা রক্তে hCG (human chorionic gonadotropin) হরমোনের উপস্থিতি শনাক্ত করে। এই হরমোন গর্ভধারণের পরপরই উৎপন্ন হয় এবং প্রস্রাব ও রক্তে এর মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।

তবে, মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি মহিলার শরীরে hCG হরমোনের মাত্রা ভিন্ন হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে, পরীক্ষাটি ১০ দিন পরও ইতিবাচক ফলাফল দেখাতে পারে না।

আরও নিশ্চিত ফলাফলের জন্য, আপনি ১৪-২১ দিন পর আবার পরীক্ষা করতে পারেন।

গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করার কিছু লক্ষণ:

  • মাসিক মিস হওয়া: এটি গর্ভাবস্থার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।
  • বুকের কোমলতা এবং ব্যথা: গর্ভধারণের হরমোনগুলি স্তনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যার ফলে কোমলতা এবং ব্যথা হতে পারে।
  • মানসিক অসুস্থতা: “সকালের অসুস্থতা” নামে পরিচিত, এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে দেখা দেয়।
  • হরমোন: প্রোজেস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধি ক্লান্তির কারণ হতে পারে।
  • বারবার প্রস্রাব করা: বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জরায়ু মূত্রাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের ইচ্ছা হয়।
  • খাবারের প্রতি আগ্রহে পরিবর্তন: কিছু খাবারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে।
  • মেজাজের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থার হরমোনগুলি মেজাজের দ্রুত পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।

মাসিক মিস হওয়ার ১০ দিন পর থেকেই গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আপনি গর্ভবতী কিনা। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ইম্প্লান্টেশন রক্তপাত হতে পারে, যা গর্ভধারণের পর ৬ থেকে ১২ দিনের মধ্যে হালকা রক্তপাত বা প spotting, এটি সবসময় হয় না।

আপনি যদি মনে করেন যে আপনি গর্ভবতী হতে পারেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থা পরীক্ষাগুলি গর্ভধারণের পর ১০ দিনের মধ্যেই ৯৯% সঠিক হতে পারে।

এখানে কিছু অতিরিক্ত তথ্য রয়েছে যা আপনার জানা দরকার:

  • প্রতিটি মহিলার গর্ভাবস্থা আলাদা হয়। কিছু মহিলা তাদের গর্ভাবস্থার প্রথম দিকেই লক্ষণগুলি অনুভব করে, অন্যরা নাও করতে পারে।
  • আপনি যদি গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি অনুভব করেন তবে এটি অবশ্যই নিশ্চিত করে না যে আপনি গর্ভবতী। অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থাও একই লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে।
  • আপনি যদি মনে করেন যে আপনি গর্ভবতী হতে পারেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করুন। তারা আপনার গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করতে পারে এবং আপনার প্রসবপূর্ব যত্ন শুরু করতে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ কি খেলে বীর্য অনেক ঘন হয় এবং দ্রুত বীর্য পাত বন্ধ হয়
মাসিক মিস হওয়ার ১০ দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়
মাসিক মিস হওয়ার ১০ দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়

মিলনের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে হয়

সাধারণত, মিলনের পর ২১ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যেতে পারে। যদিও কিছু টেস্ট ১০ দিন পর্যন্ত গর্ভাবস্থা শনাক্ত করতে পারে, তবে ২১ দিন অপেক্ষা করলে ফলাফল আরও নির্ভুল হবে।

কারণ:

  • ডিম্বাণু নিষিক্ত হতে সময় লাগে: মিলনের পর, শুক্রাণু ডিম্বাণুতে পৌঁছাতে এবং নিষিক্ত করতে ২-৩ দিন সময় লাগতে পারে। নিষিক্ত ডিম্বাণু (যা এখন একটি ভ্রূণ) তারপর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করতে ৬-১২ দিন সময় লাগে।
  • hCG হরমোন: নিষিক্ত ডিম্বাণু hCG (মানব chorionic gonadotropin) নামক একটি হরমোন উৎপন্ন করে। এই হরমোন গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে রক্ত এবং প্রস্রাবে পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।
  • গর্ভাবস্থা পরীক্ষা: গর্ভাবস্থা পরীক্ষা hCG হরমোনের উপস্থিতি শনাক্ত করে। যদিও কিছু টেস্ট ১০ দিন পর hCG শনাক্ত করতে পারে, ২১ দিন অপেক্ষা করলে হরমোনের মাত্রা পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে সময় পায়, ফলে ফলাফল আরও নির্ভুল হয়।

কিছু টিপস:

  • প্রথম সকালের প্রস্রাব ব্যবহার করুন: hCG হরমোনের মাত্রা সকালে সর্বোচ্চ থাকে।
  • প্যাকেজের নির্দেশাবলী সাবধানে অনুসরণ করুন।
  • যদি আপনি ফলাফল সম্পর্কে অনিশ্চিত হন, তাহলে পরীক্ষাটি পুনরাবৃত্তি করুন বা আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

মনে রাখবেন: এই তথ্য শুধুমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে এবং কোনও চিকিৎসা পরামর্শ হিসাবে বিবেচিত করা উচিত নয়। আপনার যদি কোনও প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

গর্ভবতী মেয়েদের স্বাস্থ্যের যত্ন:

সাধারণ নির্দেশিকা:

  • নিয়মিত চেকআপ: একজন ডাক্তারের সাথে নিয়মিত চেকআপ করা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে প্রথম ত্রৈমাসিকে।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্য: প্রচুর ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং লিন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা বা গর্ভবতীদের জন্য যোগব্যায়াম করুন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম: প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমান।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন।
  • ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন: ধূমপান ও মদ্যপান গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতিকর।
  • ক্যাফেইন সীমাবদ্ধ করুন: প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন পান করবেন না।
  • নিষিদ্ধ ওষুধ এড়িয়ে চলুন: কোনও ওষুধ খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • স্ট্রেস কমান: যোগব্যায়াম, ধ্যান বা গভীর শ্বাসের মাধ্যমে স্ট্রেস কমাতে শিখুন।

খাবার:

  • প্রচুর ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য খান: এগুলো ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রয়োজনীয়।
  • লিন প্রোটিন খান: মাছ, মুরগির মাংস, ডাল, বাদাম এবং বীজ প্রোটিনের ভালো উৎস।
  • স্বাস্থ্যকর চর্বি খান: অ্যাভোকাডো, বাদাম, জলপাই তেল এবং মাছের তেল স্বাস্থ্যকর চর্বির ভালো উৎস।
  • ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান: দুধ, দই, পনির, সবুজ শাকসবজি এবং বাদাম ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।
  • আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান: মাংস, মুরগির মাংস, মাছ, ডাল, শুকনো ফল এবং শাকসবজি আয়রনের ভালো উৎস।
  • ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার খান: শাকসবজি, ফল, ডাল, বাদাম এবং সিরিয়াল ফোলেটের ভালো উৎস।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন: প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

  • কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন: কাঁচা বা অসিদ্ধ মাংস, মাছ, ডিম, অপাস্তুরাইজড দুধ, নরম পনির, অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
  • সতর্কতা অবলম্বন করুন: বিড়ালের মল, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ ওষুধ এবং সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে চলা উচিৎ।
More: সবচেয়ে ভালো ভিটামিন ডি কোনটি?

পিরিয়ডের বৈজ্ঞানিক ধারণা:

পিরিয়ড, যা ঋতুস্রাব নামেও পরিচিত, হল নারীর প্রজনন চক্রের একটি স্বাভাবিক অংশ। প্রতি মাসে, গর্ভাশয়ের অন্দরের আস্তরণ, যা এন্ডোমেট্রিয়াম নামে পরিচিত, একটি শিশুকে ধারণ করার জন্য প্রস্তুত হয়। যদি গর্ভধারণ না হয়, তবে এই আস্তরণটি ভেঙে যায় এবং যোনীপথ দিয়ে রক্ত, শ্লেষ্মা এবং কোষের সাথে মিশে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। এটিই পিরিয়ড।

পিরিয়ডের বিজ্ঞান:

  • হরমোন: পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ করে এমন দুটি প্রধান হরমোন হল এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন। এস্ট্রোজেন এন্ডোমেট্রিয়ামকে ঘন করতে সাহায্য করে, যখন প্রোজেস্টেরন গর্ভাশয়ের আস্তরণকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। গর্ভধারণ না হলে, প্রোজেস্টেরনের মাত্রা হ্রাস পায়, যার ফলে এন্ডোমেট্রিয়াম ভেঙে যায় এবং পিরিয়ড শুরু হয়।
  • চক্র: গড় মাসিক চক্র 28 দিন দীর্ঘ হয়, তবে 21 থেকে 35 দিনের মধ্যে যে কোনও দৈর্ঘ্য স্বাভাবিক। চক্রের প্রথম অর্ধেককে ফলিকুলার পর্যায় বলা হয়, যখন এস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। চক্রের দ্বিতীয় অর্ধেককে লুটইয়িল পর্যায় বলা হয়, যখন প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  • লক্ষণ: পিরিয়ডের সাথে বিভিন্ন লক্ষণ যুক্ত থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে পেটে ব্যথা, ক্লান্তি, মেজাজের পরিবর্তন, ব্রণ এবং মাথাব্যথা। এই লক্ষণগুলি হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয়।
  • প্রবাহ: পিরিয়ডের প্রবাহ হালকা থেকে ভারী হতে পারে এবং এটি 2 থেকে 7 দিন স্থায়ী হতে পারে।

পিরিয়ড সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  • পিরিয়ড অস্বাস্থ্যকর নয়: এটি একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা প্রতিটি প্রজননশীল বয়সী মহিলা অনুভব করেন।
  • পিরিয়ড নোংরা নয়: যোনি এবং রক্ত প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার করে।
  • আপনার পিরিয়ড সম্পর্কে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই: এটি সম্পর্কে আপনার বন্ধু, পরিবার এবং ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।
  • আপনার পিরিয়ড সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *