ইন্টারনেট কি ? ইন্টারনেট হল বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক যা কম্পিউটার, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ডিভাইস কে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে।
এই সংযোগের মাধ্যমে আমরা তথ্য শেয়ার, যোগাযোগ, বিনোদন, শিক্ষা, বাণিজ্য এবং আরও অনেক কিছু করতে পারি।
ইন্টারনেটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:
- বৈশ্বিকতা: ইন্টারনেট বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে অ্যাক্সেস করা যায়।
- বিকেন্দ্রীকরণ: ইন্টারনেটের কোন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী নেই।
- খোলা প্রকৃতি: ইন্টারনেট সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং ব্যবহারের জন্য বিনামূল্যে।
- বহুমুখিতা: ইন্টারনেট তথ্য শেয়ার, যোগাযোগ, বিনোদন, শিক্ষা, বাণিজ্য এবং আরও অনেক কিছু করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইন্টারনেটের কিছু ব্যবহার:
- তথ্য শেয়ার: ইন্টারনেট তথ্য শেয়ার করার জন্য একটি সহজ এবং দ্রুত মাধ্যম। আমরা ওয়েবসাইট, ইমেল, সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন এবং আরও অনেক কিছু ব্যবহার করে তথ্য শেয়ার করতে পারি।
- যোগাযোগ: ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী মানুষের সাথে যোগাযোগ করার জন্য একটি সহজ এবং দ্রুত মাধ্যম। আমরা ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন, ভিডিও কল এবং আরও অনেক কিছু ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে পারি।
- বিনোদন: ইন্টারনেট বিনোদনের জন্য একটি বিশাল উৎস। আমরা ভিডিও দেখতে, গেম খেলতে, সঙ্গীত শুনতে, বই পড়তে এবং আরও অনেক কিছু করতে পারি।
- শিক্ষা: ইন্টারনেট শিক্ষার জন্য একটি মূল্যবান হাতিয়ার। আমরা অনলাইন কোর্স, ট্রুটোরিয়াল, ইবুক এবং আরও অনেক কিছু ব্যবহার করে শিখতে পারি।
- বাণিজ্য: ইন্টারনেট বাণিজ্যের জন্য একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম। আমরা অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারি, ব্যবসা করতে পারি এবং অর্থ উপার্জন করতে পারি।
ইন্টারনেট আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি তথ্য শেয়ার, যোগাযোগ, বিনোদন, শিক্ষা, বাণিজ্য এবং আরও অনেক কিছু করার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
আরও পড়ুনঃ হার্ডওয়্যার কি ? WHAT IS HARDWARE?
বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু হয় কত সালে ?
বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু হয় ১৯৯৩ সালে।
প্রথম ধাপে:
- আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (AUB) ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করে।
- তারা ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড, কলেজ পার্ক এর সাথে একটি ৫৬ কেবিপিএস লিঙ্ক স্থাপন করে।
দ্বিতীয় ধাপে:
- বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ সংস্থা (বিটিসিএল) ১৯৯৬ সালের ৬ জুন বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারনেট চালু করে।
- তারা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) হিসেবে কাজ শুরু করে এবং গ্রাহকদের ডায়াল-আপ সংযোগ প্রদান করে।
তৃতীয় ধাপে:
- ২০০০ সালের দশকের প্রথম দিকে, মোবাইল অপারেটররা মোবাইল ইন্টারনেট চালু করে।
- এর ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানে:
- বাংলাদেশে ১২.৬ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, যা জনসংখ্যার ৮০% এরও বেশি।
- ইন্টারনেট বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য যে, ইন্টারনেটের ইতিহাস জটিল এবং বহুমুখী। একক ব্যক্তি বা ঘটনাকে ইন্টারনেটের উদ্ভাবনের জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী করা সম্ভব নয়। অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেটের উন্নয়নে অবদান রেখেছে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার?
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার: বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। 2024 সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশে 12.6 কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, যা জনসংখ্যার 80% এরও বেশি।
ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির কারণ:
- স্মার্টফোন ব্যবহারের বৃদ্ধি: সস্তা স্মার্টফোন বাজারে আসার ফলে অনেক বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শুরু করেছে।
- মোবাইল ডেটা ব্যয় হ্রাস: মোবাইল অপারেটররা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে ডেটা অফার করছে, যা ইন্টারনেট ব্যবহারকে আরও সাশ্রয়ী করে তুলেছে।
- সরকারি উদ্যোগ: সরকার “ডिजिटल বাংলাদেশ” কর্মসূচির মাধ্যমে দেশব্যাপী ইন্টারনেট অ্যাক্সেস বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে।
- ইন্টারনেটের সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি: মানুষ বুঝতে পারছে যে ইন্টারনেট শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন এবং ব্যবসার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রভাব:
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: ইন্টারনেট ব্যবহার ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
- সামাজিক উন্নয়ন: ইন্টারনেট শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সরকারি পরিষেবাগুলিতে অ্যাক্সেস উন্নত করছে। এটি মানুষের যোগাযোগ এবং তথ্য ভাগ করে নেওয়ার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করছে।
- সাংস্কৃতিক পরিবর্তন: ইন্টারনেট বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন করতে এবং নতুন ধারণা শেয়ার করতে সাহায্য করছে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু চ্যালেঞ্জ:
- ডিজিটাল বিভাজন: গ্রামীণ এলাকায় এবং নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস কম।
- ইন্টারনেট নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা: সাইবার অপরাধ এবং অনলাইন হয়রানির ঝুঁকি রয়েছে।
- ডিজিটাল দক্ষতার অভাব: অনেক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে জ্ঞান রাখে না।
- মানসম্পন্ন সামগ্রীর অভাব: বাংলা ভাষায় পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সামগ্রী নেই।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করা যায় যে, সরকার এবং বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস বৃদ্ধি, ডিজিটাল দক্ষতা
ইন্টারনেটের জনক কে?
ইন্টারনেটের জনক হিসেবে দুজন ব্যক্তিকে সম্মানিত করা হয়:
১) ভিন্টন গ্রে “ভিন্ট” সার্ফ:
- তিনি ইন্টারনেট প্রোটোকল স্যুট (TCP/IP) এর সহ-উদ্ভাবক, যা আধুনিক ইন্টারনেটের ভিত্তি।
- তিনি ARPANET এর নকশায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যা প্রথম ব্যাপক প্যাকেট-স্যুইচড নেটওয়ার্ক ছিল।
- তিনি ইন্টারনেট সোসাইটির (ISOC) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
২) রবার্ট কান:
- তিনি ARPANET এর সহ-উদ্ভাবক এবং TCP/IP এর সহ-উদ্ভাবক।
- তিনি ইন্টারনেট প্রোটোকল টাস্ক ফোর্স (IPTF) এর চেয়ারম্যান ছিলেন, যা TCP/IP স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছিল।
- তিনি ইন্টারনেটের জনক হিসেবে স্বীকৃত একজন প্রভাবশালী কম্পিউটার বিজ্ঞানী।
উল্লেখ্য যে, ইন্টারনেটের উন্নয়নে অনেক ব্যক্তি অবদান রেখেছেন। সার্ফ এবং কান দুজনই মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাই তাদের ইন্টারনেটের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার ভাইরাস কি | WHAT IS A COMPUTER VIRUS?
ইন্টারনেট নেট এঁর খারাপ দিক কি?
ইন্টারনেটের অনেক সুবিধা থাকলেও, এর কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। কিছু উল্লেখযোগ্য খারাপ দিক নীচে দেওয়া হলো:
1) সাইবার অপরাধ:
- ইন্টারনেট সাইবার অপরাধের জন্য একটি সহজ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
- হ্যাকিং, ফিশিং, সাইবার বুলিং, সাইবার সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি সাইবার অপরাধের মধ্যে রয়েছে।
- এই অপরাধগুলি ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, আর্থিক ক্ষতি, খ্যাতি ক্ষুণ্ণ করা এবং মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
2) ভুল তথ্য ও গুজব:
- ইন্টারনেট ভুল তথ্য এবং গুজব ছড়ানোর জন্য একটি সহজ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইন সংবাদপত্র প্রায়শই ভিত্তিহীন তথ্য এবং প্রচার ছড়িয়ে দেয়।
- এটি জনমতকে প্রভাবিত করতে, সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে এবং হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পারে।
3) অশ্লীলতা:
- ইন্টারনেট অশ্লীল সামগ্রী অ্যাক্সেস করার জন্য একটি সহজ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
- শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা এই ধরনের সামগ্রীর বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
- অশ্লীলতা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর नकारात्मक প্রভাব ফেলতে পারে, সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে এবং সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
4) আসক্তি:
- ইন্টারনেট আসক্তি একটি বর্ধমান সমস্যা।
- মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গেমিং, অনলাইন শপিং এবং অন্যান্য অনলাইন কার্যকলাপে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে পারে।
- ইন্টারনেট আসক্তি বাস্তব জীবনের সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, শিক্ষাগত ও কর্মক্ষেত্রে পারফরম্যান্স কমাতে পারে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
5) গোপনীয়তা লঙ্ঘন:
- ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার সময় গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি থাকে।
- হ্যাকাররা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে এবং অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।
- কোম্পানিগুলি তাদের গ্রাহকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং বিক্রি করতে পারে।
- গোপনীয়তা লঙ্ঘন ব্যক্তিগত এবং আর্থিক ক্ষতি করতে পারে এবং খ্যাতি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
উপসংহার
আশা করছি ইন্টারনেট বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারলেন যা আপনাদের জিবনে অনেক উপকারে আসবে । ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য।