“আধুনিক কম্পিউটারের জনক” কে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, কারণ কম্পিউটারের উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অবদান রয়েছে।
তবে, দু’জন ব্যক্তিত্বকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় এবং তারা হলেনঃ
- চার্লস ব্যাবেজ (1791-1871): তাকে “কম্পিউটারের জনক” বলা হয়। তিনি ডিফারেন্স ইঞ্জিন নকশা করেছিলেন, যা প্রথম প্রোগ্রামযোগ্য মেকানিক্যাল কম্পিউটার হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও তিনি এটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি, তার ধারণাগুলি আধুনিক কম্পিউটারের নকশার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
- জন ভন নিউম্যান (1904-1957): তাকে “আধুনিক কম্পিউটারের স্থপতি” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ভন নিউম্যান আর্কিটেকচার তৈরি করেছিলেন, যা আজকের বেশিরভাগ কম্পিউটারের নকশার ভিত্তি। তিনি ENIAC-এর বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যা প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছে:
- অ্যালান টুরিং: তিনি টুরিং মেশিন তৈরি করেছিলেন, যা কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি তাত্ত্বিক মডেল। তিনি এনিগমা কোড ভেঙে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
- হাওয়ার্ড আইকেন: তিনি হার্ভার্ড মার্ক I তৈরি করেছিলেন, যা প্রথম বড় আকারের ইলেকট্রোমেকানিক্যাল কম্পিউটার।
- গ্রেস হুপার: তিনি COBOL প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেছিলেন, যা ব্যবসায়িক অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
অতএব, “আধুনিক কম্পিউটারের জনক” কে নির্ধারণ করা কঠিন, কারণ এটি বেশ কয়েকজন ব্যক্তির অবদানের ফসল।
আর পড়ুনঃ সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়
চার্লস ব্যাবেজ কোন দেশের নাগরিক?
চার্লস ব্যাবেজ ছিলেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি ২৬ ডিসেম্বর, ১৭৯১ সালে লন্ডন, ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন বিখ্যাত গণিতবিদ, দার্শনিক, প্রকৌশলী ও আবিষ্কারক ছিলেন। তিনি “ডিফারেন্স ইঞ্জিন” নকশা করার জন্য বিখ্যাত, যা প্রথম প্রোগ্রামযোগ্য মেকানিক্যাল কম্পিউটার হিসেবে বিবেচিত হয়।
যদিও তিনি ডিফারেন্স ইঞ্জিন সম্পূর্ণ করতে পারেননি, তার ধারণাগুলি আধুনিক কম্পিউটারের নকশার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। এই কারণে তাকে “কম্পিউটারের জনক” বলা হয়।
ব্যাবেজ তার জীবদ্দশায় অনেক অবদান রেখেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে:
- অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন: ডিফারেন্স ইঞ্জিনের উন্নত সংস্করণ, যা আরও জটিল গণনা করতে পারে।
- স্ট্যাটিস্টিক্যাল টেবলস: বীমা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহৃত তথ্যের একটি সংগ্রহ।
- কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন: তিনি প্রোগ্রামিং, অ্যালগরিদম এবং ডেটা স্ট্রাকচারের ধারণাগুলির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
চার্লস ব্যাবেজ ১৮৭১ সালের ১১ আগস্ট লন্ডনে মারা যান। তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্মরণিত হন।
বিশ্বের প্রথম কম্পিউটারের নাম কি?
বিশ্বের প্রথম কম্পিউটারের নাম নির্ধারণ করা জটিল, কারণ কম্পিউটারের ধারণা ক্রমবর্ধমানভাবে জটিল হয়ে উঠেছে। তবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে বিশ্বের প্রথম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে চলুন দেখে নি কি সেই গুলো।
1. অ্যান্টিকাইথেরা যন্ত্র (Antikythera Mechanism):
- খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ সালে তৈরি একটি প্রাচীন গ্রিক যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর।
- গ্রহ এবং নক্ষত্রের অবস্থান গণনা করতে ব্যবহৃত হত।
- এটি প্রোগ্রামযোগ্য ছিল না, তবে এটি জটিল গাণিতিক হিসাব করতে সক্ষম ছিল।
2. পাস্ক্যালিন (Pascaline):
- ১৬৪২ সালে ব্লেজ পাষ্কাল কর্তৃক আবিষ্কৃত একটি যান্ত্রিক মেশিন, সংখ্যা যোগ এবং বিয়োগ করতে ব্যবহৃত হত।
- প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর ছিল।
3. ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine):
- ১৮২২ সালে চার্লস ব্যাবেজ কর্তৃক নকশা করা একটি যান্ত্রিক কম্পিউটার।
- জটিল গাণিতিক সূত্র সমাধান করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
- কখনো সম্পূর্ণ করা হয়নি, তবে এটি আধুনিক কম্পিউটারের নকশার জন্য ভিত্তি স্থাপন করে।
4. কলোসাস (Colossus):
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা তৈরি একটি ইলেকট্রনিক কম্পিউটার।
- জার্মান এনিগমা কোড ভাঙতে ব্যবহৃত হত।
- আধুনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত।
5. ইলেকট্রনিক নিউমেরিকাল ইন্টিগ্রেটর অ্যান্ড ক্যালকুলেটর (ENIAC):
- ১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার।
- বৈজ্ঞানিক এবং প্রকৌশলগত হিসাবের জন্য ব্যবহৃত হত।
- আধুনিক কম্পিউটারের আদিম রূপ হিসেবে বিবেচিত।
আরও পড়ুনঃ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি
বর্তমানে কম্পিউটার কি কি কাজে লাগে?
বর্তমান কম্পিউটার আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এর কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যবহার নীচে তালিকাভুক্ত করা হল:
1. যোগাযোগ:
- ইমেইল, মেসেজিং, ভিডিও কনফারেন্সিং, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করা।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য অনুসন্ধান করা এবং শেয়ার করা।
2. শিক্ষা:
- অনলাইন কোর্স এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা।
- ইলেকট্রনিক বই এবং গবেষণা উপকরণ পড়া।
- শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করা এবং শিক্ষামূলক উপকরণ অ্যাক্সেস করা।
3. বিনোদন:
- গান শোনা, মুভি দেখা, এবং ভিডিও গেম খেলা।
- সঙ্গীত তৈরি করা এবং শিল্পকর্ম তৈরি করা।
- বিনোদনমূলক ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা।
4. কাজ:
- ডকুমেন্ট তৈরি করা, স্প্রেডশিট তৈরি করা, এবং উপস্থাপনা তৈরি করা।
- ইমেইল এবং বার্তা পাঠানো এবং গ্রহণ করা।
- ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করা এবং প্রকল্পগুলিতে সহযোগিতা করা।
5. ব্যবসা:
- গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করা এবং লেনদেন প্রক্রিয়া করা।
- পণ্য এবং পরিষেবা বাজারজাত করা।
- ডেটা বিশ্লেষণ করা এবং ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
6. চিকিৎসা:
- রোগ নির্ণয় করা এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা।
- ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ করা।
- রোগীর তথ্য সংরক্ষণ করা এবং ট্র্যাক করা।
7. বিজ্ঞান ও গবেষণা:
- জটিল গাণিতিক হিসাব করা এবং ডেটা বিশ্লেষণ করা।
- বৈজ্ঞানিক সিমুলেশন চালানো এবং গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা।
- নতুন আবিষ্কার এবং প্রযুক্তি তৈরি করা।
8. পরিবহন:
- যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ করা এবং ট্র্যাফিক পরিচালনা করা।
- ভ্রমণের পরিকল্পনা করা এবং টিকিট বুক করা।
- পরিবহন ব্যবস্থার দক্ষতা এবং নিরাপত্তা উন্নত করা।
9. উৎপাদন:
- রোবট এবং মেশিন নিয়ন্ত্রণ করা।
- উৎপাদন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা এবং নিয়ন্ত্রণ করা।
- পণ্যের মান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
10. সরকার:
- নাগরিকদের পরিষেবা প্রদান করা এবং কর সংগ্রহ করা।
- আইন প্রয়োগ করা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- নির্বাচন পরিচালনা করা এবং সরকারি নীতি তৈরি করা।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো দুই বা ততোধিক কম্পিউটার এবং ডিভাইসের একটি সমষ্টি যা ডেটা এবং তথ্য আদান-প্রদানের জন্য যোগাযোগের মাধ্যম দ্বারা সংযুক্ত থাকে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের ফাইল, প্রিন্টার, এবং অন্যান্য সম্পদ ভাগ করতে, একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে এবং একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে প্রোগ্রাম চালাতে সাহায্য করে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের কিছু মূল উপাদান হল:
- কম্পিউটার: নেটওয়ার্কের সদস্য
- নেটওয়ার্ক ডিভাইস: রাউটার, সুইচ, মডেম, ইত্যাদি যা ডেটা প্রেরণ এবং গ্রহণ করে
- নেটওয়ার্ক মিডিয়া: তার, কেবল, ওয়্যারলেস সংযোগ, ইত্যাদি যা ডেটা বহন করে
- নেটওয়ার্ক প্রোটোকল: নিয়ম এবং নির্দেশিকা যা নেটওয়ার্কে ডেটা কীভাবে প্রেরণ এবং গ্রহণ করা হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে
- নেটওয়ার্ক সফ্টওয়্যার: অপারেটিং সিস্টেম, অ্যাপ্লিকেশন, ইত্যাদি যা নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা পরিচালনা করে
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN): একটি ছোট এলাকায়, যেমন একটি অফিস, বাড়ি বা বিদ্যালয়ে সংযুক্ত কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক।
- মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (MAN): একটি শহর বা শহুরে এলাকায় সংযুক্ত কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক।
- ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (WAN): একটি বৃহৎ ভৌগোলিক এলাকায়, যেমন একটি দেশ বা মহাদেশ জুড়ে সংযুক্ত কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক।
- গ্লোবাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (GAN): পৃথিবীর সকল অংশে সংযুক্ত কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক, যেমন ইন্টারনেট।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের অনেক সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- তথ্য ভাগ করে নেওয়া: ব্যবহারকারীরা সহজেই ফাইল, ছবি, এবং অন্যান্য ডেটা একে অপরের সাথে ভাগ করে নিতে পারে।
- যোগাযোগ: ব্যবহারকারীরা ইমেল, চ্যাট, এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
- সম্পদ ভাগ করে নেওয়া: ব্যবহারকারীরা প্রিন্টার, স্ক্যানার, এবং অন্যান্য ডিভাইসগুলি ভাগ করে নিতে পারে।
- খরচ কমানো: নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ব্যবসাগুলি সফ্টওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের খরচ কমাতে পারে।
উপসংহারঃ
আজকের এই আর্টিকেল টি যদি আপনার কাছে ভাল লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না ।