পুরুষের হার্নিয়া রোগ কেন হয়, আপনার যদি হার্নিয়া জনিত কোনো সমস্যা বা প্রশ্ন থেকে তাহলে আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য তো চলুন শুরু করি। হার্নিয়া হলো যখন শরীরের কোনো অংশ দুর্বলতার মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। পুরুষদের ক্ষেত্রে, হার্নিয়া সাধারণত পেটের পেশী বা ইনগ্রোয়েনাল ক্যানালের মাধ্যমে ঘটে।
পুরুষদের হার্নিয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- পেশী দুর্বলতা: পেটের পেশী বা ইনগ্রোয়েনাল ক্যানালের দুর্বলতা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এই দুর্বলতা জন্মগত, আঘাত, অস্ত্রোপচার, বা ক্রমাগত চাপের কারণে হতে পারে।
- বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেটের পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যার ফলে হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন পেটের পেশির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- শারীরিক পরিশ্রম: কাশি, হাঁচি, বা ভারী জিনিস বহন করার মতো শারীরিক পরিশ্রম পেটের পেশির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- শারীরিক অবস্থা: কিছু শারীরিক অবস্থা, যেমন সিস্টিক ফাইব্রোসিস বা প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য অস্ত্রোপচার, হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
জটিলতা
অনুপচিকিত হার্নিয়া গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- বন্দি হার্নিয়া: যখন হার্নিয়াটেড অঙ্গটি ইনগ্রোয়েনাল ক্যানালে আটকে যায়, তখন এটিকে বন্দি হার্নিয়া বলা হয়। এটি ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।
- আটকে যাওয়া হার্নিয়া: যখন বন্দি হার্নিয়ার রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তখন এটিকে আটকে যাওয়া হার্নিয়া বলা হয়। এটি টিস্যু ক্ষতি এবং এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
প্রতিরোধ
হার্নিয়ার ঝুঁকি কমাতে আপনি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে:
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- ধূমপান ত্যাগ করুন।
- ভারী জিনিস বহন করার সময় আপনার পিঠের পেশীগুলোকে সমর্থন করুন।
- কাশি বা হাঁচির মতো দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা হাঁচির চিকিৎসা করুন।
চিকিৎসা
হার্নিয়ার চিকিৎসা সাধারণত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে করা হয়। অস্ত্রোপচারের সময়, হার্নিয়াটেড অঙ্গটি তার সঠিক স্থানে ফিরিয়ে আনা হয় এবং দুর্বল এলাকাটি শক্তিশালী করা হয়।
হার্নিয়া অপারেশন করলে কি বাচ্চা হয়না
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, হার্নিয়া অপারেশন করলে বাচ্চা না হওয়ার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। হার্নিয়া অপারেশন একটি শারীরিক অস্ত্রোপচার যা পেটের পেশীর দুর্বলতা মেরামত করে যার ফলে অন্ত্র বা অন্যান্য অঙ্গ বেরিয়ে আসতে পারে। এই অপারেশনের ফলে প্রজনন অঙ্গ বা প্রজনন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
পুরুষদের ক্ষেত্রে:
কিছু ভুল ধারণা রয়েছে যে হার্নিয়া অপারেশন শুক্রাণু সংখ্যা বা গতিশীলতা কমাতে পারে। তবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে হার্নিয়া অপারেশনের পরে পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতার উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।
মহিলাদের ক্ষেত্রে:
মহিলাদের ক্ষেত্রেও হার্নিয়া অপারেশনের ফলে ডিম্বাশয় বা জরায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এবং গর্ভधारणের ক্ষমতার উপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
তবে, কিছু বিরল ক্ষেত্রে, অপারেশনের সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে যা প্রজনন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
অতএব, হার্নিয়া অপারেশন করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবেন:
- হার্নিয়া অপারেশন একটি নিরাপদ এবং কার্যকর প্রক্রিয়া যা হার্নিয়ার উপসর্গগুলি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।
- হার্নিয়া অপারেশন করলে বাচ্চা না হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
আপনার যদি হার্নিয়া সম্পর্কে কোন প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
আরও পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার ভিটামিন
প্রথম হার্নিয়া রোগ কোন দেশে ধরা পড়ে?
“প্রথম হার্নিয়া রোগ কোন দেশে ধরা পড়ে” এই প্রশ্নটির উত্তর নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন কারণ হার্নিয়া একটি প্রাচীন রোগ যা সম্ভবত মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই মানুষকে প্রভাবিত করে আসছে।
প্রাচীন মিশরীয়, গ্রীক এবং রোমানদের লেখায় হার্নিয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়।
তবে, কোন দেশে প্রথম হার্নিয়া রোগ ধরা পড়েছিল তা নির্ধারণ করা কঠিন কারণ সেই সময়ের চিকিৎসা নথি এবং রেকর্ডগুলি খুঁজে পাওয়া কঠিন।
তবে, কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য রয়েছে:
- প্রাচীন মিশর: মিশরীয় মমিগুলিতে হার্নিয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা নির্দেশ করে যে এই অবস্থাটি 5,000 বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষকে প্রভাবিত করে আসছে।
- প্রাচীন গ্রীস: হিপোক্রেটিস, একজন প্রাচীন গ্রীক চিকিৎসক, হার্নিয়া সম্পর্কে লিখেছিলেন এবং এর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণনা করেছিলেন।
- প্রাচীন রোম: সেলসাস, একজন প্রাচীন রোমান চিকিৎসক, হার্নিয়ার অস্ত্রোপচারের একটি বিস্তারিত বিবরণ লিখেছিলেন।
এই তথ্যগুলি থেকে বোঝা যায় যে হার্নিয়া একটি প্রাচীন অসুস্থতা যা বিভিন্ন সভ্যতায় ধরা পড়েছিল।
আধুনিক যুগে, হার্নিয়া সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ, হার্নিয়ার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ওপেন সার্জারি, ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি এবং রোবটিক সার্জারি।
রোবটিক সার্জারি কি?
রোবটিক সার্জারি হলো এক ধরণের অস্ত্রোপচার যা শল্যচিকিৎসকদের রোগীদের শরীরে অত্যন্ত ছোট ছোট কাটা দিয়ে অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম করে।
এই অস্ত্রোপচারে, শল্যচিকিৎসক একটি কন্ট্রোল কনসোল থেকে একটি রোবটিক বাহু নিয়ন্ত্রণ করে।
কনসোলে, শল্যচিকিৎসক 3D ভিডিও স্ক্রিনের মাধ্যমে রোগীর ভেতরের অংশ দেখতে পান।
রোবটিক বাহুগুলি অত্যন্ত নিখুঁত এবং কম্পনহীন, যা শল্যচিকিৎসকদের আরও সূক্ষ্ম এবং সঠিক অস্ত্রোপচার করতে দেয়।
রোবটিক সার্জারির কিছু সুবিধা:
- কম আঘাতজনিত: রোবটিক সার্জারিতে ছোট কাটা ব্যবহার করা হয়, যার ফলে কম ব্যথা, দ্রুত সুস্থতা এবং কম দাগ হয়।
- উন্নত নির্ভুলতা: রোবটিক বাহুগুলি অত্যন্ত নিখুঁত এবং কম্পনহীন, যা শল্যচিকিৎসকদের আরও সূক্ষ্ম এবং সঠিক অস্ত্রোপচার করতে দেয়।
- বেশি ভালো দৃশ্যমানতা: 3D ভিডিও স্ক্রিন শল্যচিকিৎসকদের রোগীর ভেতরের অংশের আরও ভালো দৃশ্যমানতা প্রদান করে।
- কম রক্তক্ষরণ: রোবটিক সার্জারিতে সাধারণত কম রক্তক্ষরণ হয়।
- দ্রুত সুস্থতা: রোবটিক সার্জারির পরে রোগীরা সাধারণত দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
রোবটিক সার্জারি বিভিন্ন ধরণের অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- সাধারণ অস্ত্রোপচার: অ্যাপেন্ডিসাইটিস, পিত্তথলি অপসারণ, এবং হার্নিয়া মেরামত
- গাইনোকলজিকাল অস্ত্রোপচার: হিস্টেরেক্টমি, মায়োমেক্টমি, এবং অ্যাডনেক্সেক্টমি
- ইউরোলজিক্যাল অস্ত্রোপচার: প্রোস্টেটেক্টমি, সিস্টেক্টমি, এবং নেফ্রেক্টমি
- কার্ডিয়াক অস্ত্রোপচার: করোনারি বাইপাস গ্রাফটিং এবং ভালভ মেরামত
- নিউরোলজিক্যাল অস্ত্রোপচার: মস্তিষ্কের টিউমার অপসারণ এবং মেরুদণ্ডের অস্ত্রোপচার
রোবটিক সার্জারি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা উচিত:
- রোবটিক সার্জারি প্রতিটি রোগীর জন্য উপযুক্ত নয়। আপনার জন্য রোবটিক সার্জারি উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করতে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
- রোবটিক সার্জারি সাধারণত ঐতিহ্যবাহী ওপেন সার্জারির চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।
রোবটিক সার্জারির সাথে কিছু ঝুঁকিও যুক্ত রয়েছে, যেমন সংক্রমণ, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়
নিউরোলজি কি?
নিউরোলজি: মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিজ্ঞান
নিউরোলজি হল চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি শাখা যা মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড এবং স্নায়ুতন্ত্রের কাঠামো ও কার্যকারিতা, সেইসাথে এগুলির সাথে সম্পর্কিত রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের সাথে সম্পর্কিত।
নিউরোলজি বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে, যার মধ্যে রয়েছে:
- মস্তিষ্কের রোগ: স্ট্রোক, আঘাত, নিউরোডেজেনারেটিভ রোগ (যেমন আলঝেইমার এবং পার্কিনসন), সংক্রমণ, টিউমার, এবং জন্মগত ত্রুটি।
- মেরুদণ্ডের রোগ: হার্নিয়েটেড ডিস্ক, স্পাইনাল স্টেনোসিস, ফ্র্যাকচার, এবং সংক্রমণ।
- স্নায়ুতন্ত্রের রোগ: পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, মায়োপ্যাথি, এবং নিউরোমাসকুলার রোগ (যেমন মায়াস্থেনিয়া গ্রাভিস এবং এমায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস)।
- মানসিক রোগ: বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, স্কিজোফ্রেনিয়া, এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডার।
নিউরোলজিস্টরা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে নিউরোলজিক্যাল রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করেন, যার মধ্যে রয়েছে:
- শারীরিক পরীক্ষা: নিউরোলজিস্টরা আপনার স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করবেন।
- ইমেজিং পরীক্ষা: এমআরআই, সিটি স্ক্যান, এবং এক্স-রে ব্যবহার করে মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড এবং স্নায়ুগুলির চিত্র তৈরি করা।
- ইলেক্ট্রোডায়াগনস্টিক পরীক্ষা: স্নায়ু এবং পেশীর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি (ইমজি) এবং নার্ভ কন্ডাকশন স্টাডি (NCS) ব্যবহার করা।
- রক্ত পরীক্ষা: নির্দিষ্ট নিউরোলজিক্যাল রোগের জন্য পরীক্ষা করা।
- মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা: মানসিক রোগ নির্ণয় ও মূল্যায়ন করা।
নিউরোলজি একটি জটিল এবং দ্রুত বিকশিত ক্ষেত্র। নিউরোলজিস্টরা নিয়মিত নতুন জ্ঞান এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করছেন যা নিউরোলজিক্যাল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবন উন্নত করতে সাহায্য করছে।
আপনার যদি নিউরোলজিক্যাল রোগের লক্ষণ থাকে, যেমন মাথাব্যথা, দুর্বলতা, বা স্পর্শ হারানো, তাহলে একজন নিউরোলজিস্টের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।
নিউরোলজিস্ট আপনার রোগ নির্ণয় করতে এবং আপনাকে উপযুক্ত চিকিৎসা পেতে সাহায্য করতে পারবেন। পুরুষের হার্নিয়া রোগ কেন হয় |
শেষকথা
আসা করি আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে, যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।